🕌 দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও যিকির (কোরআন ও হাদীস থেকে)
ইসলামে জীবনের প্রতিটি কাজের জন্য দোয়া ও যিকির শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিম যখন খাওয়া, ঘুম, ভ্রমণ কিংবা নতুন পোশাক পরার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন সাধারণ কাজগুলোও ইবাদতে রূপ নেয়। এখানে কোরআন ও সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত দৈনন্দিন দোয়া ও যিকির তুলে ধরা হলো।

দিনের ক্লান্তি শেষে যখন মানুষ ঘুমাতে যায়, তখন এটি আসলে এক ধরনের ছোট মৃত্যুর স্বাদ। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ শিখিয়েছেন ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে।
আরবি:
اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মৃত্যু বরণ করি এবং তোমার নামেই জীবন লাভ করি।
📖 সূত্র: সহীহ বুখারি, হাদীস ৬৩১৪
✨ ফজিলত:
এই দোয়া পড়লে ঘুমের সময় আল্লাহর হেফাজত লাভ হয় এবং মানুষ মনে রাখে মৃত্যুর পর পুনর্জাগরণ অবশ্যই ঘটবে।
প্রতিদিনের শুরু আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে করা উচিত। নবী ﷺ সকালে জেগে এই দোয়া পড়তেন।
আরবি:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানী ওয়ানা আব্দুক।
অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তোমার ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা।
সূত্র: সহীহ বুখারি, হাদীস ৬৩১৬
ফজিলত:
সকালে এই দোয়া পড়লে দিনের শুরুতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয় এবং বরকত আসে।
সমাপ্তি:
এই দোয়াটি প্রতিদিনের জীবনে নিয়মিত পড়লে, হৃদয়ে শান্তি ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
মানুষ টয়লেটে প্রবেশ করার সময় শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য দোয়া পড়া সুন্নত।
আরবি:
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিখা মিনাল খুবসি ওয়াল খোবায়িছ।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।
📖 সূত্র: সহীহ বুখারি, হাদীস ১৪২
✨ ফজিলত:
এ দোয়া পড়লে টয়লেটে প্রবেশের সময় জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে হেফাজত পাওয়া যায়।
আরবি:
غُفْرَانَكَ
উচ্চারণ:
গুফরানাকা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাই।
📖 সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদীস ৩০
✨ ফজিলত:
এই দোয়া পড়লে আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।
খাবারের শুরুতে আল্লাহর বরকত কামনা করা সুন্নত।
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى بَرَكَةِ اللَّهِ
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহি ওয়া ‘আলা বরাকাতিল্লাহ।
অর্থ:
আল্লাহর নামে এবং তাঁর বরকতের সঙ্গে খাবার শুরু করছি।
সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৬৭
ফজিলত:
- খাবারে বরকত বৃদ্ধি করে।
- শয়তান খাবারে অংশ নিতে পারে না।
সমাপ্তি:
এই দোয়াটি নিয়মিত পড়লে খাবারে শান্তি ও বরকত আসে।
খাবার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য।
আরবি:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ
উচ্চারণ:
আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী আত‘আমানি হাজা ওয়া রাযাক্বনিহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নি ওলা কুওয়াতিন।
অর্থ:
সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খাবার দিলেন এবং আমার কোনো শক্তি বা সামর্থ্য ছাড়াই রিজিক দান করলেন।
📖 সূত্র: সুনান তিরমিজি, হাদীস ৩৪৫৮
✨ ফজিলত:
খাবার শেষে এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তায়ালা রিজিকের বরকত বাড়ান এবং বান্দার অন্তরে কৃতজ্ঞতা জন্মান।
মানুষ ঘরে প্রবেশ করলে আল্লাহর রহমত ও শান্তি কামনা করা উচিত। নবী ﷺ আমাদের শেখিয়েছেন ঘরে প্রবেশের আগে একটি দোয়া পড়ার মাধ্যমে ঘরকে নিরাপদ ও বরকতময় করা যায়। এটি শুধু সুন্নতই নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরবি (হারাকাতসহ):
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহি ওয়া লাজ্না ওয়া বিসমিল্লাহি খারজনা ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।
অর্থ:
আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করলাম, আল্লাহর নামে বের হবো এবং আল্লাহর উপরই আমাদের ভরসা।
সূত্র:
সুনান আবু দাউদ, হাদীস ৫৫২৪
ফজিলত:
- এই দোয়া পড়লে ঘরে প্রবেশের সময় শয়তানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- ঘরকে বরকতময় ও শান্তিপূর্ণ করা হয়।
- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ভরসা বৃদ্ধি পায়।
সমাপ্তি:
এই দোয়াটি আমাদের জীবনে নিয়মিত চর্চা করা উচিত, যাতে প্রতিদিন ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা অনুভব করা যায়।
মানুষ যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন নানা বিপদ ও ফিতনায় পড়তে পারে। তাই রাসূল ﷺ একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন।
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহ, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লাহ, ওলা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ:
আল্লাহর নামে বের হচ্ছি, আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। শক্তি ও ক্ষমতা কেবল আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
📖 সূত্র: সুনান আবু দাউদ, হাদীস ৫০৯৫
✨ ফজিলত:
এই দোয়া পড়লে আল্লাহ বান্দাকে শয়তানের কুমন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং জীবনের কাজে বরকত দেন।
মসজিদে প্রবেশ করার সময় আল্লাহর রহমত ও বরকত কামনা করতে দোয়া পড়া সুন্নত।
আরবি:
اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ:
“আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা “
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার জন্য তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও।
📖 সূত্র: সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১৩
✨ ফজিলত:
এ দোয়া পড়লে মসজিদে প্রবেশের সময় রহমতের দরজা খোলা হয়।
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নবী ﷺ আল্লাহর বরকত প্রার্থনা করতেন।
আরবি:
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি।
📖 সূত্র: সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭১৩
✨ ফজিলত:
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনার মাধ্যমে জীবনে বরকত নেমে আসে।